শাবিপ্রবিতে সহপাঠীকে অজ্ঞান করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ভিডিও করে ব্ল্যাকমেইল

প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৫, ১০:০৩ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

কোল্ড ড্রিংকসের সাথে নেশা জাতীয় পদার্থ মিশিয়ে মেয়ে সহপাঠীকে খাইয়েছে দুই বন্ধু। এরপর অজ্ঞান অবস্থায় সেই মেয়েকে তাদের মেসে নিয়ে রাতভর ধর্ষণ করেছে পালাক্রমে। শুধু ধর্ষণ-ই নয়, সেই ভিডিও ধারণ করে পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আবারও মেসে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছে দুই বন্ধু।

শুনে মনে হতে পারে এটি একটি সিনেমার দৃশ্য। শুনতে নাটক-সিনেমার মতো হলেও এমনটিই ঘটেছে হযরত শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি)।

শাবিপ্রবির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দুই বন্ধু শান্ত তারা আদনান ও স্বাগত দাস পার্থ। তাদেরই মেয়ে বন্ধু ছিলেন ভুক্তোভোগী। দীর্ঘদিন ধরে একসাথে ক্লাস-পরীক্ষা-আড্ডার মধ্য দিয়েই হয়েছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক-ই যে ভুক্তোভোগীর জন্য কাল হয়ে দাড়াবে তা কল্পনারও বাহিরে।

ঈদুল আজহার আগে গত ২রা মে, সিলেটের রিকারীবাজারে একটি কনসার্টে যাওয়ার জন্য ভুক্তোভোগীকে আমন্ত্রণ জানায় শান্ত ও পার্থ। বন্ধুদের আহ্বানে কনসার্টে যাওয়ার জন্য রাজি হন তিনি। নির্ধারিত দিতে শান্ত ও ভুক্তোভোগী আখালিয়া খুলিয়াপাড়াস্থ স্থানে দেখা করেন।

শান্ত তারা আদনান আখালিয়ার খুলিয়াপাড়ার একটি মেসে থাকেন। তাদের দুজনের দেখা হওয়ার পর ভুক্তোভোগীকে একটি কোল্ড ড্রিংকস খেতে দেন। এই কোল্ড ড্রিংকসে আগে থেকেই নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে রেখেছিলেন শান্ত।

এরপর, শান্ত কনসার্টের আপডেট জানার জন্য পার্থকে ফোনকল করলে পার্থ তাদের সুবিদবাজারে যেতে বলে। তারা দু’জন সুবিদবাজারে যাওয়ার পর মেয়েটি ধীরে ধীরে অসুস্থতা অনুভব করতে থাকে। অসুস্থতার মাত্রা তীব্র হলে মেয়েটি তাকে হলে দিয়ে আসতে অনুরোধ করে।

এই পর্যায়ে শান্ত ও পার্থ মেয়েটিকে তার হলে না নিয়ে অচেতন অবস্থায় খুলিয়াপাড়ায় শান্তর মেসে নিয়ে যায়। মেসে নিয়েই পান্থ অচেতন অবস্থাতেই মেয়েটির সাথে লিপ্ত হতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে ভুক্তোভোগী অনুভব করতে পারেন যে তার শরীরের কাপড় খুলে ফেলা হচ্ছে। এসময় সে বাধা দিলেও পার্থতে আটকাতে ব্যর্থ হন। প্রথমবার পার্থ ধর্ষণ করে চলে যায়।

এরপর মেয়েটির কাছে আছে শান্ত। শান্তও জোরপূর্বক ধর্ষণ করে মেয়েটিকে। শুধু তাই নয়, এসময় তারা ভিডিও ধারণ করেছে।

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শান্ত মেয়েটির গায়ে হাত তোলেন এবং এই কথা বাহিরের কাউকে না জানানোর জন্য হুমকি দেন। মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও দেখিয়ে বলেন যে, বাহিরের কাউকে বললে তারা এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিবে।

এই ভয়ে মেয়েটি প্রথমে কাউকে কিছু বলেনি। কিন্তু ঈদের পর ক্যাম্পাস খুললে মেয়েটিকে ভিডিও পাঠিয়ে আবারও মেসে আসতে বলে শান্ত ও পার্থ। এরূপ পরিস্থিতিতে মেয়েটি তার ঘনিষ্ঠ দুই বান্ধবীকে বিষয়টি জানালে তারা তার পাশে দাড়ান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মাধ্যমে আইনি সহায়তা পাওয়ার জন্য সহযোগিতা করেন।

প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রায় দেড় মাস আগের ওই ধর্ষণের ঘটনায় শুক্রবার (২০ জুন) সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।

মামলা অনুসারে সিলেটের কোতোয়ালী মডেল থানা দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হক বলেন, অভিযুক্ত দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একজনকে ক্যাম্পাস থেকে এবং অপরজনকে সুরমা আবাসিক এলাকা থেকে আটক হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাদের পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও জানিয়েছেন, ভুক্তভোগী ছাত্রী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৯(৩) ধারা ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২-এর ৮(১)/৮(২) ও ৮(৩) ধারায় মামলা করেন। এতে শান্তকে এক নম্বর ও পার্থকে দুই নম্বর আসামি করা হয়। এছাড়া দুই থেকে তিনজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ইসমাঈল হোসেন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। অভিযোগ পাওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যেই ডিজিটাল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে অভিযুক্তদের শনাক্ত করে প্রক্টর অফিসে হাজির করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আমরা ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহায়তায় পরবর্তী প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ঘটনায় শুক্রবার বিকালে ক্যাম্পাসে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সহপাঠী ও বিভিন্ন সংগঠনের শিক্ষার্থীরা।


আমার বার্তা/এমই