স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবরোধ করে আন্দোলনে স্বাস্থ্য সহকারীরা

প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:০৩ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

নিয়োগবিধি সংশোধন, বেতন বৈষম্য দূরীকরণ এবং টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানের দাবিতে টানা ৯ম দিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের প্রতিবাদে স্বাস্থ্য সহকারীরা বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগানে পুরো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পাঙ্গণ উত্তাল করে তুলেছেন।

রোববার (৭ ডিসেম্বর) দিনভর রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এর আগে বৃহস্পতিবার সারা দেশের স্বাস্থ্য সহকারীরা ঢাকায় সমবেত হয়ে দীর্ঘকালীন অবস্থান কর্মসূচি চালানোর ঘোষণা দেন।

স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করতে তাঁরা চাইতেন না। কিন্তু ২৭ বছরের দীর্ঘ প্রতিশ্রুতির পরও বাস্তব কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। 

তারা অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বারবার ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে দাবির ফাইল মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছেন, যা পুনরায় ফেরত আসে। ১৯৮৫ সালে স্বাস্থ্য সহকারীর পদ সৃষ্টির সরকারি জিও অধিদপ্তরে অদৃশ্য হয়ে গেছে।

ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) কোর্স সম্পন্ন স্বাস্থ্য সহকারীরা জানান, প্রায় দুই হাজার ২শ স্বাস্থ্য সহকারী বিভিন্ন সালে এসআইটি কোর্স সম্পন্ন করেছেন, কিন্তু তাদের যোগ্যতা সমমান হিসেবে স্বীকৃত হয়নি। তাদের দাবি, নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতা যুক্ত করে ১৪তম গ্রেড, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমাধারীদের ১১তম গ্রেডসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা, ধারাবাহিক পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ ছাড়া স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্তি এবং সমমান স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

স্বাস্থ্য সহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, নবজাতক ও গর্ভবতী মায়ের নিবন্ধন, যক্ষ্মা রোগী শনাক্তকরণ, ডটস পদ্ধতিতে ওষুধ খাওয়ানো, উঠান বৈঠক, মা সমাবেশসহ বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকেন। সপ্তাহে তিন দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত সেবা দেওয়ার পরও তাদের ভ্রমণভাতা মাত্র ৬০০ টাকা এবং বেতন ৯ হাজার ৭০০ টাকা। অন্য গ্রেডের কর্মকর্তা যারা তাদের নিচে শুরু করেছিল, তারা আজ অনেক উপরে পৌঁছেছে।

আন্দোলন কর্মসূচি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হেলথ্ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুল হক চৌধুরী জানান, তাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য জিও (প্রজ্ঞাপন) প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থান চলবে।

তিনি বলেন, আমাদের ফাইল ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করি, দেশের তৃণমূল পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত বৈষম্য শিকার স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে। জিও প্রকাশ হলেই আমরা কর্মস্থলে ফিরে যাব।

এর আগে কর্মবিরতি শুরু হয়েছিল ২৯ নভেম্বর শহীদ মিনারে। পরে তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে স্থানান্তরিত হয়। দেশব্যাপী ৬৪ জেলার স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকরা বাংলাদেশ হেলথ্ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে এই কর্মবিরতিতে অংশ নিচ্ছেন।

এদিকে কর্মসূচির কারণে দেশের ১ লাখ ২০ হাজার অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। টিকা নিতে আসা মা ও শিশুরা ফিরে যাচ্ছেন। পাশাপাশি গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য সহকারীরা সতর্ক করেছেন, দ্রুত সমাধান না হলে সংক্রামণ রোগের চরম ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে মা ও শিশুরা।

আমার বার্তা/এল/এমই