দেশে অসময়ে আমে ভরপুর বাজার

প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৫১ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

আমের মৌসুম শেষ হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু বাজারে এখনো পাওয়া যাচ্ছে সুস্বাদু এই ফল। তাও অল্প-স্বল্প নয়, বলা যায় আমে ভরপুর বাজার! ক্রেতাদের আগ্রহও যে কম নয় সেটা বুঝা যায় দাম শুনলে। 

দেশের বাজারে আমের মৌসুম মূলত তিন মাস- মে থেকে জুলাই। তবে সেপ্টেম্বরেও এসেও বাজারে যে আম দেখা যাচ্ছে তার নাম- কাটিমন। জানা যায়, এটি ফিলিপাইনের জাত। তবে বাংলাদেশ-ভারতসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে চাষ হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ এই আমের চাষ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। কৃষকরা বলছেন, এই আম বছরে ২ থেকে ৩ বার ফলন দেয়।

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কমবেশি চাষ হচ্ছে এই আম। তবে বেশি চাষ করছেন রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা।
 
রাজশাহীর তানোর উপজেলায় ৫০ বিঘা জমিতে কাটিমনের বাগান করেছেন আলামিন। তিনি জানান, মৌসুম শেষে অন্য জাতের আম শেষ হলেও কাটিমনের বাজার থাকে জমজমাট। এতে আয়ও বেড়েছে আগের চেয়ে।
 
একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন এক কৃষক। তিনি বলেন, 'আগে ভাবতাম আম তো শুধু মৌসুমের সময়ই পাওয়া যায়। কিন্তু এখন কাটিমন বছরে একাধিকবার ফলন দিচ্ছে। বছরজুড়েই ব্যস্ত থাকতে হয় বাগান পরিচর্যায়। খরচও তুলনামূলক কম, আর বাজারে ভালো দাম পাচ্ছি।'

কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, 'মুকুল ভাঙা ও নিয়মিত পরিচর্যার কারণে কাটিমনের ফল বড় হয় এবং স্বাদও আলাদা। এ কারণে পাইকারি বাজারে এর দাম কেজিপ্রতি ১৪০ টাকার ওপরে।
 
শুধু কৃষক নয়, ব্যবসায়ীরাও কাটিমন নিয়ে আশাবাদী। ব্যবসায়ী শাহিন আলম জানান, 'মৌসুমের বাইরে যখন অন্য আম নেই, তখন কাটিমন ক্রেতারা দারুণ পছন্দ করছেন।'
 
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আম বিক্রেতা ফয়সল বলেন, 'কাটিমন এখন দেশেই চাষ হচ্ছে। রাজশাহীতে বেশি চাষ হচ্ছে। প্রতিকেজি ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করছি।'

আড়তদার খায়রুল ইসলাম বলেন, 'চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রহনপুরে প্রচুর চাষ হচ্ছে কাটিমন আম। মৌসুমের বাইরে এই আমের চাহিদা বেশি। খেতেও মিষ্টি। পাইকারিতে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়।'
 

অসময়ে আম পেয়ে খুশি ক্রেতারাও। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ফল কিনতে আসা তৌহিদ বলেন, 'আগে শুধু জৈষ্ঠ্য মাসে আম পাওয়া যেত। সারা বছর অপেক্ষা করতে হতো। এখন যেকোনো সময় বাজারে আম কিনতে পারছি। আম আর এখন মৌসুমি ফল নয়।'

বিশেষজ্ঞদের মতে, কাটিমন বাংলাদেশে কৃষির নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের চীফ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, 'সঠিক পরিচর্যা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে শুধু দেশীয় বাজার নয়, রফতানিতেও সাফল্য আসবে।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে শুধু রাজশাহীতেই প্রায় ৯০ হেক্টর জমিতে কাটিমন আম চাষ হচ্ছে। বছরে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন। এছাড়া দেশের অন্যান্য জেলাতেও কমবেশি এ আমের বাগান গড়ে উঠছে।

আমার বার্তা/এল/এমই