দেশে উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় ৩৪ শতাংশ অপচয় হয়: সিপিডি
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:৫৬ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

দেশে উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় ৩৪ শতাংশ নষ্ট বা অপচয় হয়, যা অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), ঢাকায় অবস্থিত ডেনমার্ক দূতাবাস, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ( এফএও), বিশ্বব্যাংক এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ( ডব্লিউএফপি) এর যৌথ উদ্যোগে ‘শূন্য খাদ্য অপচয়ের পথে : বাংলাদেশে একটি টেকসই খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গঠন’ শীর্ষক সম্মেলনে এসব তথ্য উঠে আসে।
উপস্থাপিত গবেষণা পত্রে বলা হয়, দেশে উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় ৩৪ শতাংশ নষ্ট বা অপচয় হয়। এর ফলে অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। যেমন— দেশের মোট জমির প্রায় ২৭ শতাংশে যে খাদ্য উৎপাদন হয়, তা কখনোই মানুষের খাদ্য তালিকায় পৌঁছায় না।
সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য অপচয় রোধে জনসচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, আকর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও বাংলাদেশে এখনো অপুষ্টি বিদ্যমান। বিশেষ করে নারীরা এর শিকার। অন্যদিকে খাদ্য বণ্টনও অসম। তাই খাদ্য অপচয় রোধ করা এখনই জরুরি।
তিনি আরও বলেন, কৃষকরা প্রায়ই সীমিত সহায়তার কারণে খাদ্য উৎপাদনে সমস্যায় পড়েন। পর্যাপ্ত সংরক্ষণ ব্যবস্থা, মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি কিংবা অবকাঠামোগত সহায়তা না থাকায় অনেক সময় উৎপাদিত পণ্য অপচয় হয়। কৃষকরা সঠিক মূল্যও পান না।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন পরিবেশগত ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, খাদ্য অপচয় মানে শুধু খাদ্য নয়, বরং পানি, জমি ও শ্রমের মতো দুর্লভ সম্পদের অপচয়। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি হিসেবে বাংলাদেশের জন্য খাদ্য অপচয় কমানো অপরিহার্য।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ইয়ামিন বলেন, বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমি, পানি এবং প্রাণবৈচিত্র্য দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং তারা খাদ্য ঝুঁকিতে পড়ছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্ক দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এম. অ্যান্ডারস কার্লসন বলেন, বিশ্বে উৎপাদিত খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশ নষ্ট বা অপচয় হয়। এই খাদ্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত জমির পরিমাণ চীনের আয়তনের চেয়েও বড়, অথচ তা শেষ পর্যন্ত কেউ খায় না।
তিনি আরও বলেন, শুধু খাদ্যই অপচয় হয় না, উৎপাদন ও পরিবহনের সময় শক্তি এবং পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে— আগামীকাল নয়, আজ।
ফাএও’র ডেপুটি প্রতিনিধি ড. দিয়া সানু বলেন, বিশ্বে উৎপাদিত খাদ্য বিশ্ব জনসংখ্যার দেড় গুণ মানুষকে খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট হলেও অসম বণ্টন, দুর্বল অবকাঠামো এবং খাদ্য অপচয়ের কারণে অপুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে।
ডব্লিউএফপির বাংলাদেশ প্রতিনিধি জেসি উড বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, ফসল তোলার পর ৮-১৫ শতাংশ চাল এবং ২০-৪০ শতাংশ ফল ও সবজি নষ্ট হয়, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ সবজি, মাছ ও অন্যান্য খাদ্য উৎপাদনে শক্তিশালী দেশ হয়েও পর্যাপ্ত সংরক্ষণ ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়াজাত শিল্প না থাকায় অনেক খাদ্য আমদানি করতে হয়। এতে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন।
সম্মেলনে সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি খাতের উদ্ভাবক, গবেষক ও উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশে খাদ্য অপচয় কমানোর কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
আমার বার্তা/এমই