মোদি-নাকভির কথার লড়াইয়ে ক্রিকেট ফের রাজনীতির আঙিনায়
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:১১ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

দুবাইয়ে গত রাতে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারত-পাকিস্তানের লড়াইয়ে জমেছিল অভূতপূর্ব উত্তেজনা। মাঠে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর সূর্যকুমার যাদবদের দাপুটে ব্যাটিংয়ে ৫ উইকেট ও ২ বল হাতে রেখে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে শিরোপা জেতে ভারত। কিন্তু ম্যাচ শেষে ক্রিকেট নয়, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে দুই দেশের রাজনৈতিক নেতাদের মন্তব্য।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শিরোপাজয়ী দলকে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে খেলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করেন সামরিক সংঘাতের প্রসঙ্গ। নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে তিনি লেখেন, ‘মাঠের ক্রিকেটেও অপারেশন সিঁদুর। সেই একই ফল। এবারও জিতল ভারত। অভিনন্দন আমাদের ক্রিকেটারদের।’ গত মে মাসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাদের সামরিক অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে টানা কয়েক দিনের সংঘাত শেষে এই অভিযানে নিজেদের বিজয়ী দাবি করেছিল ভারত। মোদি সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে ক্রিকেট মাঠের জয়কে যুদ্ধক্ষেত্রের সাফল্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
মোদির মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি, যিনি পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘যদি যুদ্ধই তোমাদের গর্ব করার মানদণ্ড হয়, তাহলে ইতিহাসের পাতায় পাকিস্তানের কাছে তোমাদের লজ্জাজনক পরাজয়ের কথা আগে থেকেই লেখা আছে। কোনো ক্রিকেট ম্যাচ দিয়ে সেটা বদলানো সম্ভব নয়। খেলায় যুদ্ধ টেনে আনা খেলার মূল চেতনাকেই কলঙ্কিত করে।’
এই বাক্যুদ্ধের পেছনে রয়েছে দুই দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। গত এপ্রিলে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের গুলিতে এক পর্যটক নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এর পরপরই মে মাসে সীমান্তে সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ভারত ও পাকিস্তান। ভারতের পক্ষ থেকে চালানো হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। কয়েক দিনের সংঘাত শেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। কিন্তু কে আসল বিজয়ী, তা নিয়ে বিতর্ক থেকে যায় দুই পক্ষের মধ্যেই। সেই দ্বন্দ্ব যেন এবার এসে ঠেকেছে ক্রিকেটের মঞ্চে।
ফাইনালের আগে থেকেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচগুলোয় খেলার বাইরের উত্তেজনা স্পষ্ট ছিল। গ্রুপ পর্বে টসের সময় দুই দলের অধিনায়কের মধ্যে করমর্দন হয়নি। ম্যাচ শেষে ভারতীয় ক্রিকেটাররা পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলাতেও এড়িয়ে যান। সুপার ফোরেও একই ঘটনা ঘটে। আবার পাকিস্তানের কয়েকজন ক্রিকেটার বিতর্কিত উদযাপন করে নজর কাড়েন-সাহিবজাদা ফারহানের এ কে ৪৭ ভঙ্গি কিংবা হারিস রউফের বিমান দুর্ঘটনার প্রতীকী ভঙ্গি নিয়ে সমালোচনা হয়।
ফাইনালে শিরোপা গ্রহণ নিয়েও তৈরি হয় নাটকীয়তা। ভারতের শর্ত ছিল, মঞ্চে কোনোভাবেই থাকতে পারবেন না মহসিন নাকভি। কারণ, তিনি শুধু পিসিবি প্রধানই নন, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। ফলে ট্রফি তুলতে মঞ্চে যাননি সূর্যকুমার যাদবরা। পরে অদৃশ্য ট্রফি হাতে নিয়ে মেসি-ধাঁচের ভঙ্গিতে উদযাপন করেন তারা, যা নিয়েও ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
ক্রিকেট মাঠে ভারত জিতলেও ফাইনালের আসল আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে দুই দেশের রাজনৈতিক টানাপোড়েন। মোদির মন্তব্য আর নাকভির পাল্টা জবাবে এশিয়া কাপ কেবল একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়ে থাকেনি; বরং তা ভারত–পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে!
আমার বার্তা/জেএইচ