আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস আজ
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৭ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

আধুনিকতার ছোঁয়ায় দেশের বিভিন্ন খাতে উন্নয়নমূলক পরিবর্তন দেখা গেলেও বদলায়নি বিচার ব্যবস্থার চিত্র। সাক্ষী ও আসামিদের অনুপস্থিতির কারণে দীর্ঘায়িত হচ্ছে বিচারকাজ। ঘুষ লেনদেন ও প্রভাব খাটিয়ে অপরাধ চাপা দিচ্ছেন প্রভাবশালীরা। এতে প্রশ্রয় পাচ্ছে অপরাধীরা আর বিচারাঙ্গনেও ভোগান্তিতে ভুক্তভোগীরা। পুলিশের মনোভাব পরিবর্তন করা না গেলে কোনো পরিবর্তনই কাজে আসবে না বলে অভিমত আইনজীবীদের।
বুধবার (১৭ জুলাই) পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস। নামটা হয়তো সাদিয়া। পেশায় হতে পারেন চাকরিজীবী বা গৃহিণী। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে আইনের নথিতে তার পরিচয় শুধুই ধর্ষণের শিকার এক নারী।
মাত্র ১৫ বছর বয়সী মেয়ের ওপর চলা পাশবিকতার বিচারের আকাঙক্ষায় আদালতের বারান্দায় তার বাবা-মা। ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির অপেক্ষায় এভাবে পার হয়ে গেছে চার বছরের বেশি। অপহরণ ও ধর্ষণের বিচার চাওয়ায় দ্বিতীয়বার অপহৃত হয়েছে ১৩ বছর বয়সী আরেক শিশু। পুলিশি সাহায্য না পেয়ে মেয়েকে ফিরে পেতে বাবার শেষ ঠিকানা আদালত।
ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, কোন আসামিকেই ধরে না। ওরা আমার বাড়ির আশপাশেই থাকে। মামলা করায় আমার মেয়েকে আবার উঠায় নিয়ে গেছে। মেয়েকে ফিরে পেতে চাই।
আরেক ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, ওরা আমাকে হুমকি দিচ্ছে মামলা তুলে নেয়ার জন্য। আমার কাছে টাকা দাবি করে। কোর্টের সামনে বসে আছি বিচারের আশায়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, চলতি বছর জুন মাস পর্যন্ত সারাদেশে মোট ধর্ষণের সংখ্যা ৪৪১টি। যার মধ্যে মামলা হয়েছে ৩৫৮টি। ধর্ষকদের প্রভাব ও হুমকির ভয়ে অনেকেই আইনের আশ্রয় নিতে সাহস পান না বলে জানান আইনজীবী। বলেন, মামলা দায়ের হলেও অপরাধীদের ভয়ে তা প্রত্যাহার করেন অনেকে।
ঢাকায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট নাছিমা আক্তার বলেন, বাদী ও ভিকটিমকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আসামিরা ভয়ভীতি দেখায়। ভয় পেয়ে তারা আদালতে আসেন না। আর না আসায় মামলার গতি থমকে যায়। তখন তারা সাহস পায়, ভাবে যে কোনো কিছু হবে না।
মামলার সাক্ষী ও আসামিদের আদালতে উপস্থিত হতে সমন জারি করলেও হাজির হন না অনেকে। পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ও ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে সমন জারির পরও অনুপস্থিতির পরিমাণ ৬৭ শতাংশ।
জেষ্ঠ্য আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন মেসবাহ্ বলেন, পুলিশ চিন্তা করে অপরাধের পিছনে যারা আছে তারা শক্তিশালী কেউ কিনা। টাকা ছাড়া মামলা নেয়ার সংখ্যা খুবই কম। দুর্নীতিমুক্ত এবং মানুষের সেবা করার জন্য পুলিশের যে মনোভাব থাকা উচিত তা না হওয়া পর্যন্ত বিচার ব্যবস্থা ডিজিটালি বা আরও উন্নত করা হলেও কোনো লাভ নেই।
বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে সকলকে বিচারিক আশ্রয় দিতে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস। যদিও বাংলাদেশের বিচারিক চিত্রের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে এর উদ্দেশ্য।
আমার বার্তা/এল/এমই