শর্টকাট দিয়ে টেকসই গণতন্ত্র পাওয়া যায় না : তাসনিম জারা

প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪৭ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা বলেছেন, রুল অফ ল, ডিউ প্রসেস ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের বাইরে আমাদের মুক্তির কোনো রাস্তা নেই। 

শর্টকাট দিয়ে টেকসই গণতন্ত্র পাওয়া যায় না। আমাদের দীর্ঘদিন ধৈর্যের সাথে লেগে থাকতে হবে। গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে লাগে কার্যকর প্রতিষ্ঠান, যেমন– পার্লামেন্ট, স্বাধীন মিডিয়া, নির্বাচন কমিশন এবং জুডিশিয়ারি।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, রাজনীতিবিদরা এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথ সম্মান না দিলে এগুলো গড়ে ওঠা সম্ভব না। তবে সম্মান দেওয়া মানে তাদের যাচ্ছেতাই আচরণ ও বক্তব্য চুপচাপ মেনে নেওয়া নয়, বরং তাদেরকে জবাবদিহিতার মধ্যে এনে ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে হবে।

তিনি কয়েকটি উদাহরণ লেখেন–

১. কেউ অপরাধ করলে তাকে ডিউ প্রসেসের মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হবে। আদালত হরে-দরে জামিন দিলে বা রাজনৈতিক প্রভাবে কাজ করলে তা প্রমাণসহ আওয়াজ তুলতে হবে। দেখাতে হবে তুলনামূলকভাবে যে, কোনো জাজ কী অস্বাভাবিকভাবে নির্দিষ্ট কোনো দলের লোকদের বেশি জামিন দিচ্ছেন? যদি এমন প্যাটার্ন পাওয়া যায় তখন দেখতে হবে যে তিনি জামিন দেওয়ার কারণ সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করছেন কি না। দেখতে হবে, সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে কোনো নির্দিষ্ট আইনজীবীর মক্কেলদের জামিন পাওয়ার হার কি জ্যামিতিক হারে বেড়ে গেছে? এসব কাজ করা কঠিন, এসব করতে ডিসিপ্লিন লাগে। তবে প্রতিষ্ঠান গড়তে নিয়মতান্ত্রিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।

২. প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে সম্মান করতে হবে। রাজনীতিবিদরা যদি নির্বাচন কমিশনকে সম্মান না করেন, স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দেন, তাহলে নির্বাচন কমিশন কখনোই স্বাধীন হবে না। তবে সম্মান করা মানে তাদেরকে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে রাখা নয়। তারা যখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিকে অস্বীকার করে, প্রার্থীকে গুলি করে হত্যার চেষ্টাকে স্বাভাবিক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে, তখন এই আচরণের বিরুদ্ধে আমাদের আওয়াজ তুলতে হবে। এমন নির্লিপ্ত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ভালো নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়। নির্বাচনকালীন সময়ে জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত দেওয়াও অসম্ভব।

৩. গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে আমাদের স্বাধীন মিডিয়া লাগবে। মিডিয়ার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবে না, মিডিয়া হাউজ বন্ধ করা যাবে না। তবে মিডিয়া যদি ভুল তথ্য ছড়ায় কিংবা ফ্যাসিস্ট ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে, সেটা মোকাবিলা করতে হবে, তথ্য ও সত্য দিয়ে। তাদের মিথ্যাচার বা প্রোপাগান্ডাকে ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের মাধ্যমে জনসমক্ষে উন্মোচন করতে হবে। তাদের রিপোর্টে বা শব্দচয়নে বায়াস থাকলে সেটা বস্তুনিষ্ঠ গবেষণার মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। সেন্সর না করে বরং তাদের ভুল তথ্যের বিপরীতে সঠিক ন্যারেটিভ দাঁড় করানোই গণতান্ত্রিক সমাধান।

তিনি আরো লেখেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো রাতারাতি ঠিক হবে না। কিন্তু আমরা যদি আবেগের বশবর্তী না হয়ে, প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিনিয়ত এদের ভুলগুলো ধরিয়ে দিই এবং সঠিক পথটা বাতলে দিই, তবেই একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক দেশ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

আমার বার্তা/এল/এমই