দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে শরীয়তপুরের বিল্লাল নিহত

প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৫, ১৫:০১ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে বিল্লাল সিকদার (৩৮) নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টার দিকে দেশটির কেপটাউন থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরে বুস্টার শহরের ডিউড্রেন্স এলাকায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন বিল্লাল।

মো. বিল্লাল সিকদার শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চামটা ইউনিয়নের পশ্চিম দিনারা গ্রামের সিরাজ সিকদারের মেঝ ছেলে।

নিহত বিল্লালের চাচাতো ভাই ইকবাল সিকদার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ইকবাল সিকদার বলেন, ‘২০১৬ সালে বিল্লাল সিকদার জীবিকার তাগিদে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি দেন। বিল্লাল দীর্ঘ ৬ বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন শপিং মলে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে ওই শহরে একটি দোকান ভাড়া করে মোবাইলের যন্ত্রাদি বিক্রয়ের ব্যবসা শুরু করেন। প্রতিদিনের মতো নিজের দোকানে বেচাকেনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন বিল্লাল। হঠাৎ ৩ জনের একটি দল অস্ত্রধারী বিল্লালের দোকানে ঢুকে অস্ত্রের মুখে তাকে জিম্মি করে দোকান থেকে মূল্যবান মালামাল ও টাকাপয়সা লুট করে যাওয়ার সময় তাকে  একাধিক গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভিডিও করে বিল্লালের মৃত্যুর বিষয়ে পরিবারকে জানায়।

নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। আবছা আবছা চোখের আলোতে সিসিটিভি ফুটেজে নিজ সন্তানের মৃত্যুর ভিডিও দেখছেন তার বাবা সিরাজ শিকদার, কাঁদছেন গুমরে গুমরে। অন্যদিকে বিছানায় বিল্লাল বিল্লাল করে চিৎকার করে কাঁদছেন তার মা ফাতেমা বেগম।

স্বজনরা জানায়, সিরাজ শিকদারের তিন ছেলে, বড় ছেলে ঢাকায় ছোটখাটো চাকরি করে আলাদা সংসার করছেন। অন্যদিকে ছোট ছেলে প্রতিবন্ধী। মেজো ছেলে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী মো. বিল্লাল শিকদার একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যাকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করায় দিশেহারা পরিবারটি। কিভাবে চলবে এখন তাদের পরিবারের ভরণপোষণ!

বিল্লালের বাবা সিরাজ সিকদার বলেন, ‘আমরা একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছি, বিল্লালের আয়ের উপরেই চলত আমাদের পুরো পরিবার। আমার বয়স এখন ৭০ এর উপরে, আমার পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। আমরা এখন কিভাবে চলবো। সন্ত্রাসীরা বিল্লালকে গুলি করে হত্যা করেছে। সরকারের কাছে দাবি, আমার সন্তানের মরদেহটা যেন বাংলাদেশে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফিরিয়ে আনে।’

চামটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন রাড়ি বলেন, ‘বিল্লাল ৩ বছর কুয়েত প্রবাসী ছিলেন, সেখান থেকে দেশে ফিরে বেকারত্ব দূর করতে গত ৮ থেকে ৯ বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছেন উপার্জনের তাগিদে। বৃহস্পতিবার বিকেলে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা প্রবেশ করে বিল্লাল শিকদারকে মেরে ফেলে। এই পরিবারটি বিল্লাল শিকদারের আয়ের উপরে নির্ভর ছিল। বিল্লালকে মেরে ফেলায় পরিবারটি পুরো অসহায় অবস্থায় পড়ে গেল। এ অবস্থায় বিল্লালের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনাসহ এই পরিবারটিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার অনুরোধ সরকারের প্রতি।’

এ বিষয়ে নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)  আসলাম উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় শরীয়তপুরের কোনো প্রবাসী নিহত হয়েছেন কি না, সেটা আমি জানি না। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি কেউ থানায় আমাদের জানাননি।’


আমার বার্তা/এল/এমই