সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের অন্তত ৯টি গ্রামে যমুনা নদীর তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সবকিছু একের পর এক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
কৈজুরি ইউনিয়নের চর ঠুটিয়া, সোনাতনী ইউনিয়নের মাকড়া, ধীতপুর, কুড়সি, বারপাখিয়া, বড় চামতারা, বানতিয়ার এবং গালা ইউনিয়নের বৃ-হাতকোড়া ও মোহনপুর গ্রামে বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ ভাঙনের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে সোনাতনী ইউনিয়নের শ্রীপুর থেকে বারোপাখিয়া পর্যন্ত গত এক বছরে প্রায় তিন থেকে চার শতাধিক বাড়িঘর যমুনা গর্ভে চলে গেছে।
ফসলি জমি হারিয়ে এখন পথে বসেছেন বহু কৃষক পরিবার। ধীতপুর গ্রামের ৭০ ঊর্ধ্ব কালু মোল্লা বলেন, ৮৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১১ বার বসতভিটা হারিয়েছি। পটল, বেগুনসহ নানা ফসল করে সংসার চলছিল। এখন অন্যের জমিতে ঘর তুলে কোনোরকমে আছি। এই ঘরটাও এখন নদীর মুখে। একই গ্রামের মনোয়ারা বেগম জানান, ১৪ বার তার বসতভিটা যমুনায় বিলীন হয়েছে। এখন প্রতিটি রাত কাটে আতঙ্কে।
এই অঞ্চলের মানুষদের কথা বলে জানা যায়, এখানকার বালুমাটি অত্যন্ত উর্বর হওয়ায় সব ধরনের শাকসবজি, ফলমূল এবং ধান চাষে ভালো ফলন পাওয়া যায়। অনেকেই ষাঁড় গরু লালন করে বাড়তি আয় করতেন। ফলে অর্থনৈতিকভাবে মানুষ কিছুটা স্বচ্ছল হলেও এখন আবার সেই স্বচ্ছলতাও হারাতে বসেছে।
সোনাতনী ইউনিয়নের বাসিন্দা রজিনা খাতুন বলেন, এই বালুমাটি সোনার মতো ছিল। যাই বুনতাম, ভালো ফলত। এখন সব কিছু নদীতে চলে যাচ্ছে। কোথায় গিয়ে থাকবো, কী খেয়ে বাঁচব এই দুশ্চিন্তাই আমাদের শেষ করে দিচ্ছে।
কুরসি গ্রামের মাওলানা নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের গরুর হাট, মসজিদ, মাদরাসা, ঘরবাড়ি সবই নদীতে চলে যাচ্ছে। যদি দ্রুত বাঁধ না হয়, তাহলে পুরো ইউনিয়নটাই বিলীন হয়ে যাবে।
এই পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্তরা দ্রুত বাঁধ নির্মাণ ও পুনর্বাসনের জোর দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, এই ভাঙন ঠেকাতে হলে এখনই কার্যকর বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। না হলে পুরো সোনাতনী ইউনিয়নই নদীতে চলে যাবে।
এই বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ভাঙনের বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছি, তারা বালুভর্তি বস্তা ফেলার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করবে।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, চরাঞ্চলের ভাঙন রোধে এই সময়ে আমাদের হাতে কিছু নেই। তবে চরাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। সেটি চালু হলে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
এদিকে শাহজাদপুর উপজেলার কৃষি কমকর্তা জেরিন আহমেদ বলেন, গত ছয় বছরে শাহজাদপুরের তিনটি ইউনিয়নে প্রায় ২৮০ হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। যদিও এর বিপরীতে প্রায় ৯০ হেক্টর জমি নতুন করে জেগে উঠেছে।
আমার বার্তা/এল/এমই