গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার পর পুরো এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেল পৌনে তিনটার দিকে শহরের পৌর পার্ক এলাকায় এনসিপির সমাবেশ শেষে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সমাবেশ শেষ হতেই লাঠিসোঁটা হাতে একদল লোক চারদিক থেকে এনসিপির নেতা-কর্মীদের ঘিরে ফেলেন এবং অতর্কিতে হামলা চালান। তাঁরা পুলিশের গাড়ি ও নেতা-কর্মীদের গাড়ি আটকে দেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এরপর এনসিপির নেতা-কর্মীরা গাড়ি ঘুরিয়ে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পরপরই গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান পুরো জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
ঘটনার পর এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছেন। তিনি বলেন, “পুলিশ ও সেনাবাহিনী নিষ্ক্রিয় ছিল। আমাদের বলা হয়েছিল, সবকিছু নিরাপদ। কিন্তু现场 গিয়ে ভিন্ন চিত্র পাই।”
এর আগে দুপুর পৌনে দুইটার দিকে ২০০ থেকে ৩০০ জন লাঠিসোঁটা হাতে সমাবেশস্থলে আসে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা সরে গিয়ে আদালত চত্বরে আশ্রয় নেন। এনসিপির নেতা-কর্মীরাও দৌড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যান। হামলাকারীরা মঞ্চে উঠে চেয়ার ভাঙচুর করেন ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন।
বেলা ২টা ৫ মিনিটে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে সমাবেশ করেন। এদের মধ্যে ছিলেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। সমাবেশ শেষে পুনরায় হামলার শিকার হন তাঁরা।
এনসিপি গত ১ জুলাই থেকে “দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা” কর্মসূচি পালন করছে। এরই অংশ হিসেবে আজ গোপালগঞ্জে পদযাত্রা করছিল দলটি। মঙ্গলবার তাদের ফেসবুক পেজে ‘১৬ জুলাই: মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
এই পদযাত্রাকে ঘিরে আরও সহিংস ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার উলপুর-দুর্গাপুর সড়কের খাটিয়াগড় চরপাড়ায় পুলিশের একটি গাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন।
পরে সদর উপজেলার ইউএনও এম রাকিবুল হাসান ওই এলাকা পরিদর্শনে গেলে ফেরার পথে কংশুর এলাকায় তাঁর গাড়িতেও হামলা হয়। এ সময় গাড়ির চালক মোহাম্মদ হামিম আহত হন।
ইউএনও বলেন, “পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে ফেরার সময় হামলার শিকার হই। গাড়ির চালক আহত হয়েছেন।”
ঘটনার পর থেকে গোপালগঞ্জে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, চলছে টহল। ১৪৪ ধারা জারির ফলে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আমার বার্তা/এমই