আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিজয়নগর উপজেলা। উপজেলার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন চান্দুরা, বুধন্তী ও হরষপুরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের সঙ্গে সংযুক্ত করার খসড়া তালিকা প্রকাশের পর থেকেই তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ জানিয়ে আসছেন স্থানীয় জনগণ।
এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের অংশ হিসেবে শুরু হয়েছে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি, যা উপজেলার প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চলছে।
বিজয়নগরের ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনটি একটি ঐক্যবদ্ধ সামাজিক ও রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে পরিচিত। নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক খসড়া প্রস্তাবে এই অখণ্ডতাকে বিভক্ত করার আশঙ্কায় ফুঁসে উঠেছেন বিজয়নগরবাসী। তাদের মতে, এই তিনটি ইউনিয়ন ভৌগোলিকভাবে উপজেলা সদরের নিকটবর্তী এবং রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ইউনিয়নগুলোকে অন্য আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হলে উপজেলার প্রশাসনিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ঐক্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তারা মনে করছেন।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এরই মধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে বিজয়নগরবাসী। গত ৩১শে জুলাই, বৃহস্পতিবার, ১আগষ্ট শুক্রবার সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন শত শত বিক্ষুব্ধ জনতা।
বিকালে উপজেলার ১০ ইউনিয়নের সর্বদলীয় পরামর্শ সভায় করে আমতলী বাজারে, এবং কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। এখনো এলাকাবাসী তাদের দাবি থেকে এক চুলও নড়েনি। রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ এই প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছেন।
উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী সমর্থকও সাধারণ জনগণ ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সভায় এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং পুরাতন সংসদীয় সীমানা পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন।
প্রতিবাদ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণস্বাক্ষর গ্রহন চলছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে সাধারণ মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই গণস্বাক্ষরসহ নির্বাচন কমিশনে আপত্তির আবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ১০ই আগস্ট পর্যন্ত এই খসড়া তালিকার ওপর আপত্তি, অভিযোগ ও সুপারিশ জানানো যাবে।
ঢাকায় অবস্থানরত বিজয়নগরবাসীরাও এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। তারা নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে স্মারকলিপি প্রদান ও প্রতীকী অনশনের মতো কর্মসূচিও পালন করেছেন। আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তাদের দাবি মানা না হলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচির ডাক দেওয়া হবে, যার মধ্যে ২৪ ঘণ্টার জন্য মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধের মতো কর্মসূচিও থাকতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। উপজেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সাধারণ মানুষজন তাদের লেখনীর মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করছেন এবং ঐক্যবদ্ধ বিজয়নগরের পক্ষে তাদের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করছেন। এলাকাবাসীর একটাই দাবি, বিজয়নগরের অখণ্ডতা রক্ষা করে চান্দুরা, বুধন্তী ও হরষপুর ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনেই বহাল রাখতে হবে।