দর-কষাকষির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা দেওয়া পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। তবে এই শুল্ক নিয়ে এখনো চুক্তি সই হয়নি। চুক্তি সই হওয়ার আগে শুল্ক নিয়ে আরও দর-কষাকষির সুযোগ রয়েছে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বুধবার (৬ আগস্ট) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এই ইঙ্গিত দেন।
যুক্তরাষ্ট্র যে শুল্ক নির্ধারণ করেছে সেটা স্বস্তিদায়ক কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আর একটু কমলে ভালো হতো। তারা যেটা করেছে মোটামুটি, তবে স্বস্তির জায়গা বলবো না। আমরা তো চাই এটা (পাল্টা শুল্ক) না হলে ভালো হতো। এমনিতেই বিশ্ব অনেক চ্যালেঞ্জে। আর যদি অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করা হয় তবে বাংলাদেশ খুব খারাপ পজিশনে নেই। আমাদের সুযোগ হলো- আরএমজি অনেক ভালো। আমাদের টেক্সটাইল, আমাদের নিট যেটা সেটা কিন্তু তারা অনেক তাড়াতাড়ি অ্যাডজাস্ট করতে পারবে। ওয়েভিং একটু ডিফিকাল্ট হতে পারে।
আপনারা কি আবার দর-কষাকষিতে যাবেন? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, হ্যাঁ। বাণিজ্য উপদেষ্টা এখনো আসেননি। আমি ইউএস চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের বাংলাদেশের বিষয়ে মনোভাব খুবই ভালো। বলে তুমি শেভরনের টাকা ফেরত দিয়েছ, মেটলাইফের টাকা দিয়ে দিয়েছ। বলে তোমরাতো টাকা আটকে রাখো না। ব্যবসায়ীদের কিন্তু বাংলাদেশের ওপর ভালো মনোভাব আছে।
তিনি আরও বলেন, চুক্তি এখনো সই হয়নি। একটা ফরমাল চুক্ত সই হবে। এখানে আমরা দেখবো কোন কোন জাগায় আমাদের ডিউটি (শুল্ক) কমাতে হবে। কি কি আমদানি করতে হবে।
শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে চুক্তির ‘নন-ডিসক্লোজার’ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যখন ওয়ান টু ওয়ান নেগোসিয়েশন হয়, অনকে কথা বলা হয় না। এটা মাল্টিলেটার নেগোসিয়েশন না, এটা ডব্লিউটিও না, এটা ইউএন না, যে সবাই জানবেন। ওখানে ভিয়েতনাম আমার প্রতিদ্বন্দ্বী, আবার চীন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান সবাই আছে। কতগুলো জিনিস আছে বলা যায় না।
সাংবাদিকদের আর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, খাদের কিনারা থেকে অর্থনীতি অনেকটা ওপরে উঠে এসেছে। এটা দেখার জন্য দৃষ্টি ও অন্তর্দৃষ্টি লাগে একটু। একেবারে ওপরে ওপরে ভাসা ভাসা দেখলাম, ভাসা ভাসা বলে দিলাম তা না। অনেক কিছুই হয়েছে। চ্যালেঞ্জ যেটা ছিল একেবারে প্রকুরিয়াস (ঝুঁকিপূর্ণ বা টালমাটাল) অবস্থায় ছিল। এখন আমরা একটা স্বস্তির জায়গায় আসতে পেরেছি। তবে অবশ্যই সামনে চ্যালেঞ্জ আছে। চ্যালেঞ্জ অনেকগুলো- আমাদের মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, জ্বালানি, এখন ট্যারিফের ব্যাপার আছে। আর সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ব্যবসায়ী মানুষের আস্থা আনা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য আর একটু গতি সঞ্চার করা, যেটা স্লো হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের সময়ে আমরা যেগুলো তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন করতে পারবো সে ধরনের প্রকল্পে আমরা মনোনিবেশ করছি। বিশেষত ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে সহজ হয় ভালো হয়।
মূল্যস্ফীতি কি স্বস্তির জায়গায় আসছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, স্বস্তির জায়গায় আসছে, একটু সময় লাগবে। মূল্যস্ফীতি এমন না ঘোড়ার রাশ ধরে টেনে দিলাম। ঘোড়ায় চড়তে হলে, মাথাটা টেনে তুলতে হয়। মূল্যস্ফীতি এ রকম না একদিনে সব কমিয়ে দিলাম। এটা কমছে তবে নন-ফুডটা আমাদের একটু চ্যালেঞ্জিং।
বাজেট ঘাটতি ও নির্বাচনের বাজেট নিয়ে সাংবাদিকের করা এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য যে অর্থ লাগবে আমরা দেবো। সেটা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। প্রভিশনাল হিসাব অনুযায়ী এই পর্যন্ত বাজেট ঘাটতি ৩.৬ শতাংশ মাত্র, যেটা আমরা বলেছি ৪.৫ এর মধ্যে রাখবো।
সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, ইমিডিয়েট কতগুলো জিনিস আমরা করে ফেলেছি। কতগুলো আছে মিডটার্ম, লংটার্ম আমরা সেগুলো..। যেমন ব্যাংক রেজুলেশন, একটু সময় লাগবে। বাংলাদেশ ব্যাংক একটা রোডম্যাপ করছে। ক্যাপিটাল মার্কেট মোটামুটি চেষ্টা করছে, সেটা হয় তো আরও একটু উন্নতি হবে। এনবিআর’র বিষয় আমরা তাড়াড়াড়ি… অধ্যাদেশটা কিছুটা সংশোধন করবো, সেটা করে ফেলবো। আমরা একটা টার্গেট ডিসেম্বরের মধ্যে কিছু একটা করে ফেলবো।
আমার বার্তা/এমই