বাজারে ডলারের তারল্য বেড়ে যাওয়ায় এ পর্যন্ত নিলামে ৫ দফায় ৬২ কোটি ২০ লাখ ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক বাজার স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি প্রবাসীরা যেন রেমিট্যান্সে ভালো দাম পায় এবং রফতানি আয় যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্যেই ডলার কেনা হয়েছে। এতে এই মুহূর্তে রিজার্ভ বাড়বে, যা ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক খাতকে গতিশীল রাখতে সহায়ক হবে বলে মত অর্থনীতিবিদের।
গত জুনে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ছিল ৬.৪ শতাংশ। যা ছিল গত দুই দশকে সবচেয়ে কম। সবশেষ ঘোষিত মুদ্রানীতিতেও প্রাইভেট ক্রেডিট গ্রোথ রেট বা বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি অর্জন নির্ধারণ করা হয়েছে ৭.২ শতাংশ। এই তথ্য থেকেই বোঝা যায় ব্যাবসায়িক কার্যক্রম এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক গতিতে ফেরেনি।
আর্থিক খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ব্যাংকখাতে নির্ভর করা খেলাপি ঋণের জালে ধরা পড়া ব্যবসায়ীরা পাচ্ছেন না নতুন ঋণ। সঙ্গে যোগ হয়েছে বিগত সরকারের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের অনুপস্থিতি। ব্যাংকে বাণিজ্যিক লেনদেন সীমিত। এতে বাজারে দেখা দিয়েছে ডলারের ছড়াছড়ি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ৫ আগস্টের আগের অনেক উদ্যোক্তাই এখন বাজারে নেই। ফলে তাদের অনেকের কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য হয় বন্ধ হয়ে গেছে অথবা খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। অনেকে আবার হয়েছেন ঋণ খেলাপি। তাই তাদের নতুন করে ঋণ পাওয়ার সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সরকারের বিভিন্ন নীতিমালার সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবসা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ব্যবসায়ীরা। এই কারণে বর্তমানে ব্যাবসায়িক কার্যক্রম কিছুটা ধীরগতিতে চলছে।
এমন পরিস্থিতিতে ৫ দফায় বাজার থেকে নিলামে ৬২২ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সমপরিমাণ টাকাও ব্যাংকখাতে প্রবাহিত হয়েছে ব্যাংকগুলোর মধ্যে। অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, নির্বাচনের পরে রাজনৈতিক সরকার আসলে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। তখন ডলারের চাহিদা বাড়লে বাজারে ডলার বিক্রি শুরু করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যা ভালো একটি উদ্যোগ।
ডলার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বাজারে ডলারে সাপ্লাই আরও স্মুথ করতে হবে। তবে সেই ডলার যাতে প্রয়োজনীয় খাতে ব্যবহার হয় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে ডলারের পর্যাপ্ত মজুতও। যাতে ভবিষ্যতে সেটি ব্যবহার করা যায়।
বাজারে মুদ্রা বা টাকার তারল্য বাড়লে কমতে থাকে সেই মুদ্রার দাম। যেভাবে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে বিশ্ব থেকে প্রায় এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলে নেয়ার প্রভাবে এবং জোর করে চাপিয়ে রাখা ডলারের মূল্য এক লাফে বাড়ে। অর্থাৎ ডলারের উর্ধ্বমুখী স্কেলের সঙ্গে পতন হতে থাকে টাকার মান। যা রেমিটেন্স ও আমদানি রফতানি মূল্যেও প্রভাব ফেলে।
ফলে রফতানিমূল্য ধরে রাখতে ও রেমিটেন্সের ধারাবাহিকতা ঠিক রাখতে অর্থনীতির এই কৌশল নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ডলার কেনার ফলে রিজার্ভের পরিমাণ বেড়েছে। বাজারে ডলারের দাম স্থিতিশীল হয়েছে। এটি না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন রফতানিকারকরা। পাশাপাশি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে নিরুৎসাহিত হতেন প্রবাসীরা। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের ফলে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশের বেশি রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।
উল্লেখ্য, বাজারে ডলারের দাম ২ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেলে ডলার কিনে বাজার স্থিতিশীল রাখার পরামর্শ রয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)।
এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্যানুযায়ী, ১৪ আগস্ট পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ৩০৮৩৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন বা ৩০ দশমিক ৮৩ ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২৫৮২৭ দশমিক ৩০ মিলিয়ন বা ২৫ দশমিক ৮২ মার্কিন ডলার।
আমার বার্তা/এল/এমই