বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে যোগ হলো আরেকটি নতুন অধ্যায়। প্রথমবারের মতো এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণের সুযোগ পেলো বাংলাদেশের সার্ফিং দল। ২০২৬ সালে জাপানের নায়োগা শহরে অনুষ্ঠিতব্য ২০তম এশিয়ান গেমসে সরাসরি অংশ নেবে লাল-সবুজের তরুণ সার্ফাররা।
এই আনন্দঘন খবরটি দেশে ফিরে জানিয়েছে বাংলাদেশ সার্ফিং অ্যাসোসিয়েশন। ভারতের তামিলনাড়ুতে সদ্যসমাপ্ত ‘চতুর্থ এশিয়ান সার্ফিং চ্যাম্পিয়নশিপ’-এ অংশ নিয়েই এই অর্জন ছিনিয়ে আনে তারা।
প্রতিযোগিতা ও অর্জন
ভারতের তামিলনাড়ুর সমুদ্র সৈকতে ৩ থেকে ১২ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় এশিয়ান সার্ফিং চ্যাম্পিয়নশিপ। এতে অংশ নেয় ১৮টি দেশ। বাংলাদেশ থেকে অংশ নেয় ৫ জন সার্ফার: মোহাম্মদ মান্নান, হাসান, ইউনুচ, মাহিমা আক্তার মিলি ও ফাতেমা আকতার। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শক্তিশালী দলগুলোকে টপকে বাংলাদেশ অর্জন করে সম্মানজনক ৯ম স্থান। এই সাফল্য থেকেই বাংলাদেশ পায় এশিয়ান গেমস ২০২৬-এ সার্ফিংয়ের অংশগ্রহণের স্বীকৃতি।
প্রস্তুতি শুরু কক্সবাজারে
দেশে ফিরেই বিশ্রামের সুযোগ নেই লাল-সবুজের সার্ফারদের। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে শুরু হয়েছে কঠোর অনুশীলন। কোচ রাশেদ আলমের তত্ত্বাবধানে প্রতিদিনই ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন মান্নান-হাসানরা। লক্ষ্য একটাই-এশিয়ান গেমসে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনা।
এ বিষয়ে কোচ রাশেদ আলম বলেন, ‘সার্ফাররা এবার চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো করেছে বলেই এশিয়ান গেমসে জায়গা পেয়েছে। এটা বিশাল এক অর্জন। এখন থেকে কঠোর অনুশীলন শুরু হয়েছে। সার্ফারদের স্কিল বাড়াতে প্রতিনিয়ত কাজ চলছে।’
সার্ফারদের লড়াই ও স্বপ্ন
নারী সার্ফার ফাতেমা আকতার বলেন, ‘ছয় বছর ধরে সার্ফিং করছি। প্রথমবার আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশ নিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। ওখানে ঢেউগুলো ছিল পয়েন্ট ব্রেক, আর আমাদের কক্সবাজারে বিচ ব্রেক, তাই কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী, আমরাও একদিন জিতব।’
মাহিমা আক্তার মিলি বলেন, ‘প্রথমবারেই অনেক অভিজ্ঞতা হলো। এখন লক্ষ্য আরও সামনে এগিয়ে যাওয়া, দেশের জন্য জয় ছিনিয়ে আনা।’
মোহাম্মদ মান্নান, হাসান ও ইউনুচরা জানান, এশিয়ান সার্ফিং চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ করেই তারা দেশে ফিরেছেন। ভারতে নিজেদের পারফরম্যান্সে খুশি তারা। এখন তাদের স্বপ্ন- এশিয়ান গেমসে ভালো কিছু করা এবং বাংলাদেশকে সার্ফিংয়ের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করা। সে লক্ষ্য নিয়েই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
সাফল্যের নেপথ্যে
বাংলাদেশ সার্ফিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তবে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনে সদস্যপদ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে, সেটি কার্যকর হলে আমাদের পথ আরও সহজ হবে।’
অ্যাসোসিয়েশনের টিম লিডার মো. সাইফুল্লাহ সিফাত বলেন, ‘অনেক চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে আজ আমরা এখানে। এশিয়ান গেমসে জায়গা পাওয়া বিশাল অর্জন। আন্তর্জাতিক সার্ফিং ফেডারেশনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠেছে, এখন লক্ষ্য আরও বড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া।’
সামনে যা অপেক্ষা করছে
২০২৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর জাপানের নায়োগা শহরে অনুষ্ঠিত হবে ২০তম এশিয়ান গেমস। সেখানে প্রথমবারের মতো লাল-সবুজের সার্ফাররা দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। জাতীয় পর্যায়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে এই অর্জন। তরুণ সার্ফারদের এই সাফল্য হয়তো একদিন সার্ফিংকেও বাংলাদেশের মূলধারার খেলায় পরিণত করবে।
আমার বার্তা/এল/এমই