জাহাজ ভেড়ানোর পাশাপাশি কনটেইনার এবং কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিং করে এক বছরেই রেকর্ড ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ১ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা ভ্যাট-ট্যাক্স হিসেবে জমাও দিয়েছে সরকারি কোষাগারে। তবে রেকর্ড আয় করলেও জাহাজের গড় অবস্থানের সময় বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা।
গণআন্দোলন-বন্যাসহ নানামুখী জটিলতায় ঘটনাবহুল ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হিসেবে ৫ হাজার ২২৭ কোটি টাকা নিজস্ব আয়ের রেকর্ড করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। যাবতীয় খরচের পরেও উদ্বৃত্তের পরিমাণ ২ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। মূলত পণ্য নিয়ে আসা জাহাজ বন্দরের জেটিতে ভিড়িয়ে, কনটেইনার ও কার্গো পণ্য ওঠানামার মাধ্যমেই বন্দরের এই রেকর্ড আয়। এর আগের অর্থবছরে এই আয় ছিল ২ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেছেন, লাভের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলো আসছে, সেগুলোর অর্থায়ন সহজ হবে। এই অর্থ সাধারণত বন্দরের উন্নয়নমূলক কাজেই ব্যবহার করা হয়। ব্যবহারকারীদের জন্য সুযোগ তৈরি করতেই এসব উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।
আয়ের ক্ষেত্রে যেমন বন্দরের রেকর্ড হয়েছে, তেমনি সরকারি কোষাগারে দেয়ার ক্ষেত্রেও বন্দরের ভালো অবস্থানে রয়েছে। সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে ৭২৮ কোটি টাকা করপোরেট ট্যাক্স, ৬৬৭ কোটি আয়করসহ সর্বমোট ১ হাজার ৭৬৫ কোটি জমা হয়েছে সরকারের তহবিলে।
তবে বন্দরের নিজস্ব আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জাহাজের অবস্থানকালীন সময় বাড়তে থাকায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। বিশেষ করে আগে ৪৮ ঘণ্টা বা তারও কম সময়ে পণ্য নিয়ে আসা জাহাজ কাজ শেষ করে বন্দর ত্যাগ করলেও এখন তা ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টা পর্যন্ত লাগছে।
এক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোর বন্দরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর কেনো বিকল্প দেখেছেন না ব্যবসায়ী নেতারা। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) দাবি, প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে কঠিন প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে। বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, বন্দরের কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে হবে। পণ্য নিয়ে আসা জাহাজ যেন প্রতিযোগী দেশগুলোর কাছাকাছি সময়ে কাজ শেষ করে বন্দর ছাড়তে পারে, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে, বিদায়ী অর্থবছরে ৩২ লাখ ৯৬ হাজার কনটেইনার এবং ১৩ কোটি ৭ লাখ মেট্রিক টন পণ্য ওঠানামা করেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। একই সঙ্গে জাহাজ এসেছে ৪ হাজার ৭৭টি। তবে নানামুখী জটিলতায় জাহাজের অবস্থানকালীন বেড়ে যাওয়া সময় কমিয়ে আনার পাশাপাশি দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের স্বার্থে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) ক্যাপ্টেন আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ বলেন, অনলাইনে পেমেন্টের সুযোগ দেয়া হয়েছে। বন্দরের কার্যক্রমে শিগগিরই আরও কিছু সেবা যুক্ত করা হবে, যাতে বন্দর ব্যবহারকারীরা সহজেই তাদের প্রয়োজনীয় সেবা নিতে পারেন।
উল্লেখ্য, বিশ্বের ১০০টি ব্যস্ততম বন্দরের মধ্যে ৬৭ তম অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর।
আমার বার্তা/এল/এমই